“কাপ্তাই লেক” পরিচিতি
পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে প্রকৃতির এক অপরুপ মনোরম পরিবেশে তাহার মুগ্ধতা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা। কাপ্তাই উপজেলার পাহাড় কন্যা , লেকের ভেসে যাওয়া জলরাশি এবং মন জুড়ানো সবুজের সমারোহে। একদিকে যেমন পাহাড় কন্যায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবস্থান তেমনি লেকের অথৈ জলে ভেসে বেরায় বহু প্রজাতির মাছ ও অফুরন্ত জীববৈচিত্রের সমাহার। ১১,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই কৃত্রিম হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সর্ববৃহৎ। সেখানে চোখে পড়বে ছোট বড় পাহাড় কন্যা,অতলে হারিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা,পাহাড় কন্যার বুক চিড়ে নেমে আসা ঝর্ণা আর জলের সাথে সবুজের মিতালী। লেকের আশেপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, নানান ধরনের রংবেরঙ্গের পাখি এবং জল ঘিরে মানুষের জীবনযাপন আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য করবে প্রত্যেকটি মূহুর্ত। কাপ্তাই হ্রদ কৃত্রিম হলেও প্রকৃতি তার সমস্ত রুপের শক্তিতে সাজিয়ে রেখেছে সবদিক থেকে। ১২ মাসই আপনি কাপ্তাই লেক(Kaptai Lake) উপভোগের জন্য যেতে পারবেন। তবে বর্ষার সময় লেকের পাশের ঝর্ণাগুলোর পরিপূর্ণ রূপ দেখার সৌভাগ্য মিলবে।
সোর্সঃ উইকিপিডিয়া
“কাপ্তাই লেকে” ইতিহাস
১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আমেরিকার সরকারের অর্থায়নে বিদ্যুৎ,পানি কেন্দ্রের জন্য কর্ণফুলি নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করে ফলে রাঙামাটি জেলার ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি প্লাবিত হয়ে এই কাপ্তাই লেকের সৃষ্টি হয়।
“কাপ্তাই লেকে” কি দেখবেন
লেকের চারপাশ ঘুড়ে দেখতে চাইলে একটা বোট বা নৌকা ভাড়া করে দেখতে পারবেন। লেকের সৌন্দর্য ভালভাবে উপভোগ করতে চাইলে পাহাড়ে কাপ্তাই লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পটে চলে যেতে পারেন। দলের সাথে গেলে সবাই এক সাথে নৌ বিহার কিংবা প্যাডেল বোটে চড়ে লেক ভ্রমণ করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া স্পিডবোট/নৌকা রিজার্ভ করে কাপ্তাই লেক ঘুরে দেখার পাশাপাশি রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ, সুভলং ঝর্ণা, রাঙ্গামাটি শহর সহ আরও অনেক স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। কাপ্তাইয়ের কাছেই কর্ণফুলি নদীতে কায়াকিং করার ব্যবস্থা আছে, চাইলে কায়াকিংয়ের অভিজ্ঞতা ও নিতে পারেন। ক্যাবল কারে চড়তে চাইলে যেতে হবে শেখ রাসেল ইকোপার্কে।

“কাপ্তাই লেক” কিভাবে যাবেন
ঢাকাবাসীরা সায়েদাবাদ কিংবা কমলাপুর থেকে বিভিন্ন মানের বাসে করে সরাসরি কাপ্তাই যেতে পারবেন এক্ষেত্রে প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে। এছাড়াও আপনি চট্টগ্রাম থেকেও কাপ্তাই যেতে পারেন খুব সহজে। বদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ৩০ – ৪০ মিনিট পর পর কাপ্তাই লেক এর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়,৮০-১২০ টাকা ভাড়া সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত। ঢাকা থেকে ট্রেনে ও চট্রগ্রাম এসে বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে কাপ্তাই যেতে পারবেন।
বান্দরবান থেকে কাপ্তাই লেক(Kaptai Lake) যেতে চাইলে রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে রাঙ্গামাটির বাসে করে বড়ইছড়ি নেমে সিএনজি দিয়ে কাপ্তাই যেতে পারবেন। রাঙ্গামাটি থেকে সড়ক পথে বাসে করে অথবা সিএনজি করে অথবা ট্রলার বা নৌকায় করে কাপ্তাই লেক হয়ে কাপ্তাই বাজার যাওয়া যায়।
“কাপ্তাই লেকে” কি খাবেন
কাপ্তাই লেকের মধ্যভাগে ছোট ছোট কিছু দ্বীপ গড়ে উঠেছে সেখানে কিছু রেস্তোরাঁ অবস্থিত। আপনি চাইলে সেখানের রেস্তোরা থেকে দুপুরের খাবার অথবা আপনার প্রয়োজনীয় খাবার খুব সহজে সংগ্রহ করতে পারবেন। কাপ্তাই লেক(Kaptai Lake) এর কাছে আছে বেরাইন্যে লেক শোর ক্যাফে, প্যারাডাইস ক্যাফে, জুম রেস্তোরা ইত্যাদি। অথবা আপনার পছন্দের খাবার খেতে ঘুরে আসতে পারেন নৌবাহিনীর ঘাঁটির পাশে ভাসমান রেস্টুরেন্ট থেকে। প্রতিদিন এই রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
“কাপ্তাই লেকের” আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- ঝুলন্ত ব্রিজ
- শুভলং ঝর্ণা
- রাজবন বিহার
- হাজাছড়া ঝর্ণা
- হ্যাপি আইল্যান্ড
- পলওয়েল পার্ক
- বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি
- কাপ্তাই বাঁধ
- কর্ণফুলি নদী
- নেভি একাডেমী
- শেখ রাসেল ইকোপার্ক
- ক্যাবল কার
“কাপ্তাই লেকে” কোথায় থাকবেন
কাপ্তাইয়ে রাতে থাকার জন্য এখনো তেমন ভালো কোন বাণিজ্যিক হোটেল বা রিসোর্ট গড়ে উঠেনি। তাই আপনি যদি রাত কাটাতে চান থাকলে আগে থেকেই কাপ্তাইয়ের সরকারি রেস্ট হাউস এর কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আসতে হবে। তাছাড়াও সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের অনুমতি সাপেক্ষ্যে সেনাবাহিনী, পিডিবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বন বিভাগের রেস্ট হাউসগুলোতে কম খরচে রাতে থাকা যায়। লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পটেও রাতে থাকার সুযোগ রয়েছে তবে এজন্য বাড়তি টাকাও দিতে হতে পারে আপনার। রাঙ্গামাটি কাপ্তাই লেক(Kaptai Lake) এর কাছে হওয়ায় অথবা আপনার ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই হলে রাঙ্গামাটিতেও থাকতে পারেন।
আপনাদের সুবিধার্থে রাঙ্গামাটিতে থাকার হোটেল বা রিসোর্ট ও রেস্টহাউজগুলোর সম্পর্কে কিছু মূল্যবান তথ্য নিম্নে প্রদান করা হলোঃ
হোটেল লেক ভিউ : রিজার্ভ বাজার, রাঙ্গামাটি, ফোন: 62063
হোটেল গোল্ডেন হিল : রিজার্ভ বাজার, রাঙ্গামাটি, ফোন: 01820-304714
হোটেল সুফিয়া : কাঁঠালতলী, রাঙ্গামাটি, ফোন: 62145
হোটেল গ্রিন ক্যাসেল : রিজার্ভ বাজার, রাঙ্গামাটি, ফোন: 61200
“কাপ্তাই লেক” ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- গ্রুপ করে যাওয়া চেষ্টা করুন তাহলে খরচ কম হবে।
- কিছু কিনতে বা খাবার খেতে হলে দরদাম করে নিবেন এতে করে আপনার খরচ বাঁচবে।
- হোটেল বা রিসোর্ট, বোট বা নৌকা এবং অন্যান্য যানবাহন ভাড়া করার সময় দরদাম করে নিবেন কারণ আপনার কাছে চালকরা বেশি দাম চাইবে।
- দিন যতই যাবে সব কিছুর দাম ততই পরিবর্তন হতে থাকবে তাই যাওয়ার আগে অবশ্যই সব কিছু যাচাই করে যাবেন এবং আমাদের দেওয়া হোটেল বা রিসোর্ট ও রেস্টহাউজগুলোর ফোন নম্বরে কল করে থাকার ব্যবস্থা করে যাবেন যদি রাতে থাকতে চান।
- পাহাড়ে চড়ার সময়, কোন যানবাহনে চড়ার সময়, পানিতে নামার সময় সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
- কোথাও তাড়াহুড়া করে কোন কাজ করবেননা কারণ সময় থেকে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
- সাথে সব সময় পানি বা হালকা কিছু খাবার রাখবেন।
বিশেষ নিবেদন
বাংলাদেশের যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের দেশের সম্পদ, আমাদের সম্পদ। এইসব স্থানগুলোর সৌন্দর্য্য রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই এইসব স্থানের প্রাকৃতিক অথবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করবনা যাতে করে এইসব স্থানগুলোর সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যায়। আমারা বাঙালি তাই আমরা কখনই চাইবনা আমাদের দেশের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যাক। আমরা নিজেরা সৌন্দর্য্য উপভোগ করি এবং সবাইকে উপভোগ করার সুযোগ করে দেই। এই দেশ আমাদের, এই দেশের সব কিছুই আমাদের তাই দেশের প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।